স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন

মানুষের এই পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে যার কোনো ব্যাখ্যা খুজেঁ পাওয়া যায়নাআর আমি অত সহজে কোনো কিছু বিশ্বাস করিনাআমি যুক্তিবাদী মানুষ অনেকেই আমাকে নাস্তিক বলেকিন্তু আমি নাস্তিক নাআমার সাথে যে গঠনাগুলো ঘটে আমি সেগুলোর ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেষ্টা করি কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পারিনা
আমার যতদুর মনে পড়ে আমার ৪ বছর বয়স থেকেই ঘটনার সুত্রপাত। (এর আগে ঘটে থাকলে তা আমার মনে নেই।) তখন আমরা খাগড়াছড়িতে ছিলামআমি তখন ও স্কুলে ভর্তি হইনিসম্ববত ১৯৯৪ সালআমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসার পাশে মাঠে খেলা করতামআম্মু ও আন্টিরা হাঁটাহাটি করততখন আমি দেখতাম মাঠে আমাদেরই মত, কিন্তু আমাদের চাইতে আলাদা কিছু মানুষ ও হাঁটাহাটি করছেএককথায়, আমি একটা দেয়ালের সামনে দাড়ালে যেমন ছায়া পড়বে তেমন, কিন্তু ছায়াটা সাদা, টর্চ লাইটের আলোর মত সাদাঅনেকগুলো সাদা আলোর মানুষ মাঠে খেলছে, আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করতাম ওগুলো কি ? আম্মু বলত শেয়াল (পাশের জঙ্গলে অনেক শেয়াল ছিল, আম্মু ভাবত শেয়াল দেখে ভয় পাচ্ছি)
এভাবে প্রতিদিনই আমি তাদের দেখতাম, আমার কাছে সেটা স্বাভাবিক ছিলআমি ভয় পেতাম না
কাহিনীতে কিছুটা পরিবর্তন আসে ১৯৯৭/৯৮ এর দিকেতখন আব্বুর বদলি হয়ে গেছে চট্টগ্রামেআমি থ্রিতে পড়িবদলটা হল, খাগড়াছড়িতে আমি ওদের দেখতাম মাঠে, আর চট্টগ্রামে ওরা চলে যায় দেয়ালে, ছায়ার মতঅবিকল একটা মানুষের ছায়া কিন্তু টর্চ লাইটের আলোর মত উজ্জ্বলসন্ধ্যায় খেলার সময় দেখতাম দেয়াল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে অনেকগুলো আলোর মানুষকিন্তু ওদের পা কখনো মাটিতে লাগানো থাকতনাশূন্যে ভাসমান থাকতআমি ভয় পেতাম নাখেলার সাথীদের বলতাম, তারা মজা করে ধরতে যেত, কিন্তু ধরতে পারত না। (পরে জানতে পারি তারা কেউ দেখত না, দুষ্টুমি করত)
২০০৩ সালে আমরা ব্রাক্ষনবাড়িয়া চলে আসিআমি তখন ক্লাস এইটে পড়িসন্ধ্যায় বের হওয়া বন্ধতাই আর আলোর মানুষ দেখিনা
২০০৬ সালআমি এস.এস.সি পরীক্ষার্থীগ্রাম থেকে নানু ও মামা এসেছেপরীক্ষার আর ১৫/১৬ দিন বাকীনানু আমার সাথে ঘুমায়আমি রাত ১.৩০ পর্যন্ত পড়ি হঠাত এক রাতে-
আনুমানিক রাত ৩.০০টাআমার ঘুম ভেঙ্গে গেলহঠাত দেখি আমার রূমে তিনজন লোক চাঁদর মুড়ি দিয়ে হাঁটছেতাদের গাঁ থেকে আলো ছড়াচ্ছেমুখ দেখা যাচ্ছেনাআমি ভয়ে পাথর হয়ে গেলামপ্রায় ৩০ মিনিট জেগে ছিলামনানুকে জড়িয়ে ধরলামনানু বলল_ “কি হয়েছে ?” আমি বললাম_ ” ভয় পাই
সকালে আমি নানুকে জিজ্ঞেস করলে নানু বলেন সত্যিই গতরাতে গতরাতে আমি ভয় পাইবলেছি। (জিজ্ঞেস করার কারন আমি যুক্তি, প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করিনা) ঘটনাটা আমার স্যারের সাথে শেয়ার করলে উনি বলেন এগুলো জ্বীনআয়াতুল কুরসী পড়ে ঘুমাতে বলেন
এর পর কেটে গেল আরও ২ বছর
২০০৮ সালআমি এইচ. এস. সি দিয়ে ঢাকা গেছি কোচিং করতেহোষ্টেলে থাকিহঠাত একদিন _
স্বপ্নে দেখি আমাকে আমার বড় খালা মারছেপেটে জোরে জোরে লাথি মারছেআমার চোখ লাল হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেআমি মরে যাচ্ছিঘুম ভেঙ্গে গেলআমি কোথায় ? এরা কারা ? আমি কে ? কিছুই মনে করতে পারছিনাআমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনাপেটে খুব ব্যাথাপ্রায় ১৫/২০ মিনিটহঠাত আমার রূমমেট আমার গা ধরে ঝাঁকুনি মারেআমার সব মনে পড়ে যায়তাকিয়ে দেখি সকাল ১১.০০ টাতার পর দেখি আমার পেট লাল হয়ে আছেযেন সত্যিই কেউ প্রচন্ড জোরে লাথি মেরেছেঘটনাটা আমার মাকে বলিতারপর বাসায় চলে যাইআম্মু একটা তাবিজ দিয়ে দেন হোষ্টেলে হঠাত একদিন দেখি হাতে তাবিজ নেইকোথাও খুঁজে পাইনাতারপর যখন বাসায় যাই_ টানা ২১ দিন জ্বর, বমিআর ভয়াবহ সব দুঃস্বপ্নপ্রতিটা স্বপ্নের বিষয় বস্তু _ আমাকে মারছে, আমি মরে যাচ্ছি, মৃতু্যর এক সেকেন্ড আগে ঘুম ভেঙ্গে যেতশরীরে খুব ব্যাথা করতসকাল, বিকাল, দুপুর, রাত যখন তখন স্বপ্নএমনকি সোফায় বসে ৫ মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করলে ও স্বপ্ন চলে আসত
তারপর, সুস্থ্য হইহোষ্টেলে যাইতাবিজটা খুজে পাই বিছানার তোশকের নিচেকিন্তু তোশকের নিচে কিভাবে গেল ?
যাই হোক২০০৯ সালে আমরা সিলেটেভার্সিটিতে ভর্তি হলামআমার বয়স ১৮+
আমার জীবনে নেমে এল ভয়াবহ বিপর্যয়একটা রাত ঘুমাতে পারিনিএক কথায় পাগল হয়ে গিয়েছিলামস্বপ্নের মাঝে কতবার যে মৃতু্যর হাত থেকে ফিরে আসতাম
ভয়াবহ সেই ড্রাকুলার চেহারা আমাকে প্রতি রাতে তাড়িয়ে বেড়াত৫ মিনিটের জন্য ঘুমাতে পারতাম নাস্বপ্নে যে জায়গায় মারা হতো ঘুম থেকে উঠার পর সে জায়গা ব্যাথা করতলাল হয়ে থাকতসায়েন্স এ নাকি এ সমস্যাকে ওহাবৎঃ জবধপঃরড়হ বলেআমার ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ প্রায় ৩ মাসআমি কি বলি, কি করি কিছুই মনে থাকেনাএমনকি আমার নানা_নানু নাকি ঐসময় আমাদের বাসায় ছিলেন কিন্তু আমি আজ ও মনে করতে পারিনাঅনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারি আমাকে নাকি তখন দেখতে অপ্রকৃতস্থের মতো দেখাতবিশেষ করে আমার চোখসাধারন ও মানসিক সব ডাক্তারই দেখানো হয়েছেতারা শুধু ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিতআর যখন খুব সমস্যা হত, ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতস্যালাইন দেয়া হত আমার মনে আছে, দিনে ৭টা ইনজেকশন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে
আমার একপাশে ভাই আর একপাশে মা ঘুমাতো, আমি মাকে ধরে রাখতাম আর ভাই আমাকে ধরে রাখতোকিন্তু স্বপ্নগুলো আমাকে ছাড়তোনাআমি প্রতি রাতে চিৎকার করতাম, দিনে যখন তখন মাথা ঘুরে পড়ে যেতামআবোল তাবোল বকতাম
এক হুজুর (আমি এগুলোতে বিশ্বাস করতাম না) আমাকে তেলপড়া মেখে ঘুমাতে বললঅবিশ্বাস্যরকম ভাবে যেদিন তেলপড়া মাখতাম সেদিন রাতে স্বপ্ন দেখতামনাযেদিন মাখতামনা সেদিন ই
আমাকে অসহায়ভাবে হুজুরবিশ্বাস করতে হলোকিন্তু সেই হুজুর আমাকে স্পষ্ট করে কিছুই বললেননা
শাহপরাণ মাজার এর হুজুর বললেন আমার উপর জ্বীনের নজর আছে। (আমি বিশ্বাস করিনা) আমাকে পানি পড়া আর তাবিজ দিলেনআমি ব্যবহার করিনিফেলে দিয়েছি সুরমা নদীতেআর আমার সেই হুজুরআমাকে একটা শরীর বন্ধের তাবিজ দিলেন যা আমি ব্যবহার করে সুফল পেয়েছি। (তাবিজ গলায় লাগাবার সাথে সাথে অবিশ্বাস্যভাবে সব ভয় চলে গেছে)
২০১০ সালআমি ২য় বর্ষে পড়ি
হঠাৎ একদিন দেখি গলায় তাবিজ নেইআমি ভয় পেলামতাবিজ খুঁজে পেলাম ঘরের এক কোণায়কিন্তু আর গলায় দিলাম নাএকদিন-
আম্মু অসুস্থ্য হয়েগেছেআবোল তাবোল বকছেহঠাৎ আমাকে ডাক দিলতোর যে বড় তাবিজটা আছে না, হুজুর যে দিছে, ঐটা ফেলে দে, ঐটা ভালো না, এক্ষন ই ফেলে দে যা ফেলে দে” (যদিও আম্মু পরে অস্বীকার করেছে)
আমি ঘাবড়ে গেলামকিন্তু তাবিজ ফেললাম নাএকটা কাঁচের বয়ামে রেখে দিলাম
তারপর-
আমি আবার স্বপ্ন দেখি…..
প্রতি রাতে…..
২০১১ সাল-
একদিন রাতে বাথরূমের আয়নায় একজনকে দেখিসেই ড্রাকুলা (অথবা অন্যকিছু)
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেতার চেহারা কী যে ভয়ংকর, আমার অনুভুতি নাহয় না ই লিখলামতবে অনেক কেঁদেছিআমার সাথেই কেন এমন হবে? আমি কি দোষ করেছি….?
এখন আমার কাছে এটা কোন ব্যাপার নাএকজনের সাথে এই ঘটনা শেয়ার করেছিলাম সে বলেছে রাতের বেলা রূমের মাঝখানে বসে তার/তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে, তারা কি চায় জানতেকরিনিকি লাভ?
দিন আগেআমার ভাইয়ের পরীক্ষা দেখলাম, সে আকাশি রঙের আর নীল জিন্স পড়ে ডান হাতে বোর্ড নিয়ে বাম হাতে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলএকটু পড়ে দেখি সে আবার একইভাবে বেড়িয়ে যাচ্ছে আমি বললাম কিরে তুই ঢুকলি কখন?” সে তো পুরা অবাক– “আমি বের হলাম কখন?” আমি বললাম- তাহলে দুই মিনিট আগে কে গেলো?” সে বলল মানে?” আমি বুঝতে পাড়লাম ঘটনা কিআমি ওকে যেতে বললামকারণ এর আগেও এ ঘটনা দুই তিন বার ঘটেছেশুধু ভয় পাচ্ছিলাম ওর যাতে কিছু না হয়
আমি অনেক কিছুই বলে দিতে পারতামযা অন্য কেউ পারতোনানিজেই অবাক হতাম যেমন- আমার বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড ভালোবাসা দিবসে কার সাথে কোথায় বেড়াতে গেছে আমি সেটা পর্যন্ত বলে দিয়েছিলাম। (যেটা এখন আর পারিনা বা পারতে চেষ্টা করিনা)
*** যারা এ লেখাটি পড়লেন আমি তাদের জায়গায় হলে এটি বিশ্বাস করতাম নাকারন আমি অবিশ্বাসিদের দলেতবে আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যার সাথে ঘটে সে ই বুঝে।।

— সংগ্রহীত —