প্রফেসর-ভূতনাথ

সেদিন ঢাকাগামী ট্রেন সুবর্ণতে যাচ্ছি ঢাকাট্রেনে চেপে বসে ১০ মিনিট পরে এক বৃদ্ধ বললেন, “Excuse me,এটা কি ২৫ নং সিট?” আমি পেছন ফেরে বেশ কিছু সময় তাঁকে দেখলামতাঁর কথার জবাব না দিয়ে আমি তাঁকে প্রথমেই একটা প্রনাম করে বললাম, “স্যার ভাল আছেন? আমি আপনার সেই প্রতিবেশী,আপনার ছাত্র নীল’’ ‘‘ওরে নীল কতদিন পর;আমায় সিটটা একটু…’’ “হ্যাঁ স্যার আপনি তো এখানেই স্যার’’
আমার স্যার,প্রফেসর ভূতনাথআমার প্রতিবেশী আবার এইচ এস সিতে Chemistry’r প্রফেসরআমার প্রিয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে তিনি একজনআমার জীবনের এক অদ্ভুত আদর্শমানুষের যে Personal matter বলে একটা কিছু থাকে সেটা তাঁর মাঝে খুব একটা বোঝা যায় না
একদিন ভোরে দাঁত মাজতে মাজতে বারান্দায় দেখলাম স্যার চেয়ারে বসে আছেনআমি জিজ্ঞেস করলাম কি স্যার আজ মর্নিং ওয়ার্কে যাননি”? “না,আজ যাই নিআজ শর্মিষ্ঠার জন্মদিনঠিক সে সময়ে সেখানে চা নিয়ে উপস্থিত স্যারের মেয়েআমি বোকার মতো তাকে বলে ফেললাম শুভ জন্মদিন’’স্যার তো রেগেমেগে অস্থির, “ওরে গর্ধব,শর্মিষ্ঠা আমার wife.’’আমি তড়িঘড়ি করে স্যারকে বললাম “sorry sir’’.স্যার কোন কথা না বলে ভেতরে চলে গেলেন
সেদিন কলেজে যাচ্ছিসিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখি স্যার গেইটের বাইরেআমি গেইটের বাইরে যেতেই বলল, “কোথায়,কলেজে নাকি”? “হ্যাঁ স্যারদাঁড়াওকিছুক্ষণ পরে একটা রিকসা ডেকে নিজে উঠে আমাকে উঠালেনএকটু নার্ভাস লাগছিল,
সকালে কি ঘটনাই না ঘটালামকলেজের মোর নিতেই তিনি রিক্সা কে বললেন সোজা চলতেআমি নেমে যেতে চেয়েছিলামকিন্তু তিনি আমায় নামতে মানা করলেনতারপর বললেন, “বুঝলে আজ চিন্তা করলাম ঘর থেকে বের হয়ে যাকে প্রথমে দেখব তাকে নিয়েই দূরে কোথাও ঘুরে আসবআমি তো ভয়ে ঘামছিতিনি আমার অবস্থা দেখে বললেন, “কি ব্যাপার ঘামছ কেন?”আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম, “না স্যার একদম ঘামছি নাআমি তো দেখতে পাচ্ছিমুছে নাও,মুছে নাওতুমি কি নার্ভাস হচ্ছো নাকি?নার্ভাস হওয়ার কিছু নেইমনে কর আমি তোমার বন্ধু সূর্যআমিও মোটামুটি স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করলামএমন সময় মোবাইলে রিং বেজে উঠলকোন রকম কথা বার্তা সেরে মোবাইল পকেটে রাখতে যাচ্ছি,এমন সময় স্যার আমায় প্রশ্ন করল, “কি প্রেম কর”?আমি বরাবরই আবার নার্ভাস হয়ে পড়লামবললাম, “না স্যারএকদমই না’’ “প্রেম কর নাশুনে অবাক হলামকি কর?”
পড়ি স্যারমানে সারাদিন বই নিয়ে’’হ্যাঁ স্যারকি আশ্চর্যঅবশ্য তোমাদের প্রেম কে প্রেম বলা চলে নাতোমরা প্রেম আর ভালবাসাকে আলাদা করে ফেলেছপ্রেম ছিল আমার আর শর্মিষ্ঠার মধ্যেতোমরা প্রেমের নামে সময় নষ্ট করআমি বলে ফেললাম, “আমি না স্যার’’সেদিন স্যারর সাথে সারাটা দিন ছিলামশুনেছি তাঁর জীবন গল্পসত্যি এভাবে জীবনের হাঁড়িয়ে যাওয়া গল্প কোন এক ছাত্রের সাথে শেয়ার করা,ঐ প্রথম স্যারকে পেলাম
নিজের দায়িত্বে ছিলেন একশ ভাগ অটলএকদিন দুষ্টুমি করে আমার বন্ধু সূর্য আমায় কলেজে যেতে বলল,যদিও সেদিন তেমন কোন important class ছিলনাতবে ভূতনাথ স্যারর ক্লাস ছিলআমি যথারীতি ক্লাসের বাইরে থেকে দেখতে পেলাম ক্লাসে কেউ নেইকিন্তু স্যারের চোখে ধরা পড়ে গেলামতখন তিনি খালি ক্লাসে রোল কল করছিলেনআমিও বাধ্য হয়ে ক্লাসে ঢুকে পরলামআমার রোল এলে আমি প্রেসেন্ট দিয়ে বললাম, “স্যার আর তো কেউ নেইআপনি স্যার সবগুলো এবসেন্ট করে দিনতিনি থামলেন নারোল কল শেষে তিনি বললেন, “দেখ ক্লাসে আসাটা তোমার দায়িত্ব আবার অধিকারতুমি আস্তেও পার নাও পারযদি আস যথা সময়ে আসআজ যদি তুমি রোল কল শেষে ক্লাসে ঢুকতে আমি তোমার প্রেসেন্ট দিতাম নাআর ক্লাসে রোল করাটা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়েতাই আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম’’কলেজের প্রতিটা ছাত্রের প্রতি ছিল সমান দায়িত্ব,সমান আদর,সমান শাসনযেদিন তাঁর ক্লাসে কোন ছাত্র ঘুমিয়ে পড়ত সেদিন সেই ছাত্রকে বকুনি বা কটূক্তি না করে গল্প করতক্লাস শেষে শুধু এইটুকুই বলত আমার ক্লাসের আগে, “ক্যান্টিন থেকে এক কাপ চা খেয়ে আসবেযদিও একবার যে ধরা পড়েছে সে আর কোনদিন ক্লাসে ঘুমোয় নিতিনি খুব ভাল করেই জানতেন,chemistry খুব বোরিং একটা বিষয় যা বুঝতে হয় কিন্তু পড়তে একটু ক্লান্ত লাগে
স্যার বেশ প্রতিবাদী ছিলেনবাম দলের পক্ষপাতী ছিলেনমনিং ওয়ার্কে তাঁর সাথে কেউই রাজনৈতিক আলাপে জিততে পারত নাআর ক্লাসে যদি গল্প শুরু করে তবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল তাঁর গল্পের বিষয়
যাহোক,সেই প্রফেসর ভূতনাথের সাথে আজ পাশাপাশি বসে ঢাকা যাচ্ছিএখনো সেই আগের মতোই আছেশুধু চশমার পাওয়ারটা বেড়েছেএই অবস্থায় এখনও পড়ছেন বি বা দীঅর্থাৎ তিন বিপ্লবী নেতার গল্প বিনয় বাদল দীনেশআর আমি তাঁর গল্প লিখে চলেছি